পর্ব ৯ঃ দেশী খাবারে ডায়েট

প্রিয় স্বপ্নযোদ্ধারা,

আশা করি আপনাদের ফিজিকাল ফিটনেস গড়ে তোলার লড়াই অব্যাহত রয়েছে। গত কদিন একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন অনেকে করেছেন- সেটি হচ্ছে, দেশি খাবার দিয়ে কিভাবে ডায়েট করা যায়??

শুরুতে ব্যস্ত লোকদের জন্য বলে দেইঃ

অতি সংক্ষিপ্ত সারমর্মঃ

“চিকা” খাবেন না। চি তে চিনি ( মিষ্টি, কেক , পেস্ট্রি ইত্যাদি) , কা তে কার্বহাইড্রেট( ভাত, পাঁউরুটি ইত্যাদি)।

“সমাস” খান। ( স= সবজি, মা=মাছ/মাংস, স=সালাদ)

“চিকা” আর “সমাস” মনে থাকলে এই ডায়েট আপনার মনে থাকবে।

‪‎বিস্তারিতঃ‬

আমি নিজে জাপানে থাকি, এখানে খাবার দাবারের মান বেশ ভালো এবং ইচ্ছে মত সবই পাওয়া যায়। বাংলাদেশেও মোটামুটি সবই পাওয়া যায়, কিন্তু অনেক সময় সহজলভ্য নয় এবং দাম বেশি।তাছাড়া আমি আজীবন জাপানে থাকবনা, তাই দেশে ফিরে কি খাব এ নিয়েও আমার মাথাব্যাথা রয়েছে।মুশকিল হচ্ছে, দেশি খাবারে ডায়েট প্ল্যানিং এর মত অভিজ্ঞতা এবং জ্ঞান আমার নেই, তাই স্মরনাপন্ন হলাম আমার মায়ের- যিনি গত বারো বছর ধরে একজন ফিজিকাল ফিটনেস প্রফেশনাল হিসেবে কর্মরত আছেন।আম্মু বিভিন্ন নিউট্রিশনিস্টদের পরামর্শের সাথে নিজের অভিজ্ঞতা মিলিয়ে দেশি খাবারের উপর ভিত্তি করে এই ডায়েট প্ল্যান করে দিয়েছেন, যেটা আমি শেয়ার করছি।

এক দিনের নমুনা ডায়েট মূলত এরকম-

‪‎ডায়েট ফ্রম আম্মুঃ

ভোরবেলা ঘুম থেকে উঠে চিনি ছাড়া লেবু পানি এক গ্লাস।

সকালের নাস্তায় এক গ্লাস গরম দুধের সাথে ওটমিল, একটা কলা, ডিম।বিকল্প হিসেবে খেতে পারেন ভুষিসহ গমের রুটি একটা, সেদ্ধ ডিম একটা , সাথে ক্ষুধা অনুযায়ী খুব অল্প তেলে রান্না করা
(তেল না দিলে আরও ভাল) সবজি। সেদ্ধ সবজি খেলে আরও ভাল। সবজির বদলে ফ্রেশ সালাদও খেতে পারেন ( কুচি কুচি করে কাটা শশা, টমেট, গাজর, ব্রোকোলি, বাধাকপি, লেটুস ইত্যাদি)। পেট ভরে খাবেন, সকালের নাস্তা প্রচন্ড গুরুত্বপূর্ণ- বলা যায় দিনের সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ খাবার এটা।সকাল সাতটা থেকে নয়টার মধ্যে নাস্তা করে ফেলা ভাল।

এরপর দুপুর এগারোটার দিকে একটা আপেল/পেয়ারা/কমলা বা দেশি কোন ফল (পেপে, কামরাঙা, সফেদা- মৌসুমী ফলসমূহ) খাবেন।

লাঞ্চ করার আগে এক গ্লাস পানিতে দুচামচ ইসবগুলের ভুষি আর একটা লেবু চিপে গুলিয়ে খেয়ে নেবেন। আর লাঞ্চে খাবেন সালাদ(সকালের মত)/ মিক্সড সবজি ( সেদ্ধ বা অল্প তেলে রান্না)/ দেশী শাক এবং সেই সাথে এক টুকরো মাছ/ মুরগীর মাংস। বাসায়/মেসে যদি ঝোল সহ রান্না করা হয়ে থাকে সেক্ষেত্রে ঝোল খাবেন না, মাছ/মাংসটা তুলে খেয়ে নেবেন। আলু খাবেন না।দুপুর একটা থেকে দুটোর ভেতরে লাঞ্চ করে নেয়া ভাল।

বিকালের নাস্তা হিসেবে একটা আপেল/পেয়ারা বা ডাবের পানি খেয়ে নিন পাঁচটার দিকে।

সন্ধ্যা সাতটা থেকে আটটার মধ্যে ডিনার সেরে নেবেন। মেনু হচ্ছে এক/দুই পিস মুরগীর মাংস, মিক্স ভেজিটেবল এবং সালাদ।

রাতে ঘুমানোর আগে ক্ষুধা লাগলে এক গ্লাস দুধ খাবেন। স্কিম মিল্ক যদি কিনতে পাওয়া না যায়, সাধারণ দুধ ফ্রিজে রেখে তারপর উপরে যে সর/ননী জমে যায় ওটা ফেলে দিয়ে নিজেই স্কিম মিল্ক বানিয়ে নিতে পারেন।

ও হ্যাঁ, দিনের শুরুর মত রাতের বেলাতেও হালকা গরম পানির সাথে লেবু মিশিয়ে খেয়ে নেবেন।

সারাদিন অন্ততঃ দুই লিটার পানি তো মাস্ট!!! সাথে পর্যাপ্ত বিশ্রাম ( ৫-৮ ঘন্টা)

মাই কমেন্টসঃ

ফিটনেস ইন্সট্রাকটর হিসেবে আমার মা ভয়াবহ রকমের কড়া- তাঁর স্টুডেন্টরা মোটামুটি পীরের মত মানে তাঁকে। উপরের গাইডলাইনটা এমনকী আমার জন্যেও বেশ কড়া হয়ে যায়- তবে এক বছরে ত্রিশ কেজির বেশি কমানোর রেকর্ডও আছে এই প্ল্যান অনুসরণ করে। ডায়েটের সাথে সাথে অতি অবশ্যই ত্রিশ মিনিট থেকে এক ঘন্টা গা ঘামানোর ব্যায়াম করতে হবে ( দৌড়, ঘরে বসে এক্সারসাইজ, জিম- যার যেভাবে সুবিধা, গা ঘামলেই হল)

আমি নিজে মোটামুটি এই গাইডলাইন অনুসরণ করেছি। যেহেতু স্ট্রেংথ ট্রেনিং আর মার্শাল আর্ট করি, মাংস বা মাছ সাধারনের তুলনায় বেশি খেতাম।সকালের ব্রেকফাস্ট করতাম পেটপুরে, দিনের বাকি খাবারগুলো এরকম নিয়ম মেপে করা হত না। লেবুর রস মেশানো পানি বা বড় মিলগুলোর মাঝে মাঝে স্ন্যাক্স হিসেবে ফল- এভাবে সব কিছু একেবারে স্কেল দিয়ে মেপে করতে পারিনি।

উপরের গাইডলাইন দেখে আপনি একটা আইডিয়া পাবেন, এটাকে নিজের পরিস্থিতি অনুযায়ী সাজিয়ে সেভাবে খাবার খাবেন, এটাই এ লেখার উদ্দেশ্য।

সতর্কীকরণঃ

১) আমি ধরে নিচ্ছি আপনি একজন সুস্থ্য, স্বাভাবিক মানুষ যার বড় ধরণের কোন রোগবালাই নেই। প্রতিটি মানুষের শরীর আলাদা, তাদের চাহিদাও একরকম নয়। বিশেষ কোন অবস্থায়
( প্রেগনেন্সি, ইনজুরি, হৃদরোগ ইত্যাদি) ডাক্তার, নিউট্রিশনিস্ট এবং ডায়েটিশিয়ানদের পরামর্শ ছাড়া ডায়েট করতে তীব্রভাবে নিষেধ করছি।

২) আই এ্যাম নট আ ডক্টর অর আ নিউট্রিশনিস্ট। এই সিরিজে আমি যেসব পদ্ধতি অনুসরণ করেছি এগুলো আমার কাজে লেগেছে, তবে এর মানে এই না যে এটি সর্বরোগের মহৌষধ। এই পদ্ধতিগুলোর সাথে যদি আপনার ডাক্তার বা নিউট্রিশনিস্টের পরামর্শের কোন সংঘর্ষ হয়, অতি অবশ্যই তাঁদের পরামর্শ গ্রহণ করুন।

৩) যে প্রশ্ন ডাক্তার, পেশাদার ট্রেইনার বা ডায়েটিশিয়ানদের করার কথা সে প্রশ্ন আমাকে না করলেই ভাল। যা আমার জ্ঞানের বাইরে, সেটা নিয়ে হাতুড়ে ডাক্তারদের মত পরামর্শ দিয়ে আপনাকে বিপদে ফেলতে আমি রাজি নই।

‪#শেষ কথাঃ‬

ফিজিকাল ফিটনেস একটা প্রসেস, এবং অত্যন্ত আনন্দময় একটা যাত্রা। এ সম্পর্কে আমার লেখাগুলো পড়ে যদি আপনার মনে আগ্রহ জাগে, তাহলেই আমার পরিশ্রম সার্থক।

সবাইকে শুভকামনা!!

 

প্রথম প্রকাশিতঃ ১২ই মার্চ, ২০১৬

Comments

comments