পর্ব ৭ঃ ডায়েট কনট্রোল কেন ও কিভাবে

ডায়েট কন্ট্রোল কেন,কিভাবে কাজ করে এবং কতদিনের জন্য?diet control ki

ব্যক্তিগতভাবে আমি প্রচন্ড রকম খেতে ভালবাসি- এবং একই রকম খাবারদাবার সব সময় খেতে ভাল লাগেনা।ডায়েট কন্ট্রোল করা আমার জন্যে বেশ কঠিন একটা কাজ।আমি প্রতিজ্ঞাবদ্ধ ছিলাম আই হ্যাভ টু গেট ব্যাক ইন শেইপ- তাই কঠোরভাবে মেনে চলেছি।তবে এর পেছনের ফিলোসফিটা জানা থাকলে আমার কাজ অনেক সহজ হত।এ বিষয়টাই আপনাদের সাথে শেয়ার করছি।

আমরা যারা ওভারওয়েট, ডায়েট কন্ট্রোল আমাদের করা প্রয়োজন শরীরে জমে থাকা অতিরিক্ত মেদ ঝরিয়ে ফেলার জন্য- এটা কমন সেন্স থেকে আমরা সবাই জানি। শরীরের যতটুকু প্রয়োজন ততটুকুর চাইতে বেশি খেয়ে নিলে এবং ব্যায়াম করে সেটা খরচ না করলে বাড়তি অংশটুকু মেদ আকারে জমা হয়- এটাও কমন সেন্স থেকেই বোঝা যায়।

আমরা প্রতিদিন যা খাই, শরীরের এনার্জির চাহিদা সেখান থেকেই পূরণ হয়। শরীরে ফ্যাট জমে থাকে ভবিষ্যতের জন্য- যখন কোন কারণে খাবার পাওয়া যাচ্ছেনা শরীর তখন জমানো ফ্যাট থেকে এনার্জি নিয়ে চাহিদা পূরণ করে।

ব্লগার এবং ডক্টর রাগ ইমন এর খুব সুন্দর একটা ব্যাখ্যা দিয়েছেনঃ আমরা যেভাবে ধাপে ধাপে টাকা খরচ করি, শরীরও সেভাবে ধাপে ধাপে গ্লুকোজ খরচ করে।বিপদ আসলে আমরা প্রথমে ক্যাশ,তারপর মায়ের গয়না এবং সব শেষে বাপের জায়গাজমি বিক্রি করে দিয়ে টাকা খরচ করি। শরীরও ঠিক তাই করে। এখানে খাবার ভেঙে পাওয়া রক্তের গ্লুকোজ হচ্ছে ক্যাশ, মাংসপেশীতে জমে থাকা প্রোটিন হচ্ছে মায়ের গয়না আর গায়ে লেগে থাকা চর্বি হচ্ছে সর্বশেষ অবলম্বন- বাবার জমি।এই কারণেই দেখবেন ছেলেদের পেটের কাছে জমে থাকা এবং মেয়েদের তলপেটের নীচে জমে থাকা ফ্যাট লেয়ার সরিয়ে ফেলা এত ভয়ঙ্কর রকমের কঠিন।শরীরের কাছে এরা হচ্ছে যক্ষের ধন, প্রচন্ড বিপদে না পড়লে শরীর তা ছেড়ে দেবেনা।

খাবার ভেঙে পাওয়া গ্লুকোজ হচ্ছে ক্যাশ টাকা, প্রতিদিনের প্রয়োজনে খরচ করা হয় যা থেকে। সেখানে টান পড়লে শরীর নিজের মাংসপেশী থেকে প্রোটিন ভেঙ্গে গ্লুকোজ নিয়ে কাজ চালায়, মানে মায়ের গহনা বেচে টাকা যোগাড় করার মত। আর যখন একেবারেই সিরিয়াস ক্রাইসিস হলে জায়গা জমি বেচে টাকা যোগাড় করা হয়- যা হচ্ছে জমে থাকা ফ্যাট।

আমাদের উদ্দেশ্য হচ্ছে শরীরে ইতোমধ্যে জমে থাকা এক্সট্রা ফ্যাট কমানো। যখন আমরা শরীরে অতিরিক্ত কার্ব এবং সুগার ঢোকানো বন্ধ করে দেব এবং যতটুকু প্রয়োজন ততটুকুই খাব, তখন দেখবেন ওজন বাড়ছেও না, কমছেও না।

ধরা যাক আপনার ওজন নব্বই কেজি, আর টার্গেট হচ্ছে ষাট কেজিতে আসা। এই নব্বই কেজি থেকে ষাট কেজিতে আসতে আপনাকে দুটো কাজ করতে হবেঃ ১) ডায়েট কন্ট্রোল এবং ২) ব্যায়াম।

ব্যায়াম করলে আপনার শরীরের চাহিদা বেড়ে যাবে, আর যেহেতু আপনি ডায়েট কন্ট্রোল করে চিনি আর কার্ব বাদ দিয়ে বাকি সব কিছু পরিমিত আকারে খাচ্ছেন- এই চাহিদা পূরণ হবে শরীরে জমে থাকা ফ্যাট ভেঙে।

এ কারণেই ডায়েট কন্ট্রোল এবং ব্যায়াম করা প্রয়োজন।

প্রশ্ন হচ্ছে, কতদিন করতে হবে এটা?

– যতদিন আপনি আপনার টার্গেট ওজনে না আসতে পারছেন ততদিন পর্যন্ত। এটা এক মাস হতে পারে, এক বছরও হতে পারে।

টার্গেট ওজনে চলে আসার পর কি সব ছেড়েছুড়ে উলুম্বুষের মত খানাপিনা শুরু করবেন??

না, এবং এখানেই ডায়েটের আসল কাজ।

দীর্ঘ সময় ধরে ( অন্ততঃ এক মাস) ডায়েট এবং ব্যায়াম নিয়মিত করার পর আপনি যখন ওজন কমিয়ে একটা সুস্থ্য জীবনে চলে আসবেন, তখন আপনার শরীরের চাহিদাও পরিবর্তিত হয়ে যাবে, আগের মত হাতির খোরাক খেতে মনে চাইবে না।

আপনার যা আদর্শ ওজন ( চার্ট সংযুক্ত করে দিলাম) চেষ্টা করবেন তার চাইতে এক দু কেজি কমের দিকে থাকতে, অথবা রেঞ্জের নিম্নসীমার দিকে অবস্থান করতে। এর ফলে এক দুদিন বেশি খেলেও এর প্রভাব খুব বেশি পড়বে না।

শরীরের যত্ন নিন, সুঠাম দেহের অধিকারী হোন- ভাল থাকুন!

( এ লেখাটি তৈরি করতে বারো বছরের প্রফেশনাল ক্যারিয়ার থেকে সহায়তা করেছেন আমার মা মেঘনা হোসেন, স্বত্বাধিকারী, মেঘনা’স ফিটনেস সেন্টার। আশা করি আপনাদের কাজে আসবে।)

 

প্রথম প্রকাশিতঃ ১৩ই মার্চ, ২০১৬

Comments

comments