ভাইয়া, ভাত/রুটি না খেয়ে থাকব কিভাবে? খালি ক্ষুধা লাগে তো!
এইটা গত তিন দিনে পাওয়া সবচেয়ে কমন প্রশ্ন।
দিনে তিনবেলা বিরিয়ানি আর বাটার নান খাওয়া এই আমি ভাত খাওয়া ছেড়েছি দুমাস হল- খুব বেশি হলে মোট পাঁচ প্লেট ভাত খেয়েছি গত দু মাস সময়ে। ভাতের সাথে সাথে ছেড়েছি সব রকমের রুটি,পাস্তা, নুডুলস। মানে, চাল/আটা/ময়দা ইত্যাদি দিয়ে তৈরি যা কিছু আছে এগুলো আমি এড়িয়ে চলি।
প্রশ্ন হচ্ছে, ভাত/রুটি না খেলে খাব টা কি? ক্ষুধা লাগলে তখন কি করা যাবে?
উত্তরটা একটু বিচিত্র, তবে হান্ড্রেড পার্সেন্ট সায়েন্টিফিক এবং পিয়ার রিভিউড স্টাডির উপর বেইজ করে দাঁড়ানো।
চিনি এবং সহজে হজম হয় এমন কার্বোহাইড্রেট (ভাত/পাঁউরুটি ইত্যাদি) আমাদের দেহে মেদ সৃষ্টির প্রক্রিয়াকে সবচাইতে বেশি স্পিড-আপ করে।মজার ব্যাপার হচ্ছে, ফ্যাট জাতীয় খাবারের ক্ষেত্রে এই প্রভাবিতকরণের হারটা সুগার বা কার্বের তুলনায় কম।কাজেই, আপনাকে শুধু ঘাস লতাপাতা খেয়ে থাকতে হবেনা-ওটা নন-ভেজদের পক্ষে সম্ভবও নয়। আপনার যখন ক্ষুধা লাগবে তখন আপনি এক বাটি সালাদের সাথে ডিম(কুসুম সহ), মাছ, মাংস (চিকেন বেশি, বিফ বা মাটন পরিমিত) , ডাল- এগুলো খেয়ে পেট ভরাবেন।চাইলে পনিরও খেতে পারেন। আপনার শত্রু হচ্ছে কার্বহাইড্রেট এবং সুগার- ফ্যাট নয়।কাবাব খেতে ভালবাসেন? একটার বদলে শিক কাবাব দুটো খান- বিনিময়ে তন্দুরি রুটিটা বাদ দিন। কাচ্চি থেকে তুলে মাংসটা খান, ভাত আর আলু বাদ দিন।
আমি যখন চোখের সামনে ভাত/তন্দুরি রুটি/পাঁউরুটি ইত্যাদি দেখি, কল্পনা করে নেই এগুলো হচ্ছে আসলে চিনি। এটা কল্পনা করে নিলেই আর মুখে তোলার রূচি হয়না।
ভাত/রুটি/পাঁউরুটি ইত্যাদির প্রতি আমাদের যে মোহ, এই মোহ থাকলে ইহজীবনে শক্তপোক্ত, মেদহীন শরীর পাওয়া সম্ভব না।
ভাত/রুটির বদলে ওটমিল খান, দুধ গরম করে তার ভেতরে তিন-চার টেবিল চামচ দিয়ে। এটাও কার্বোহাইড্রেট, তবে ভাত বা রুটির মত সরল নয়, কমপ্লেক্স। পেটে অনেক সময় ধরে হজম হয়, ফলে শেষ করেই ক্ষুধা লাগেনা।সকালে উঠে এক গ্লাস গরম দুধের সাথে মিশিয়ে খেয়ে দেখুন, দুপুর পর্যন্ত ক্ষুধা লাগবেনা।
ভাত/রুটি না খেলেও যে কার্বহাইড্রেট আমাদের দরকার সেটা শাকসবজি থেকেও কিছু পরিমাণে শরীরে চলে যায়। ব্রোকলি/বাঁধাকপি/লেটুস পাতা এগুলোতে কিন্তু কার্ব আছে। প্রচুর পরিমাণে খেলে দেখবেন ভাতের অভাবে দুর্বল ভাবটাও চলে গিয়েছে।আমি তো সালাদের সাথে মাছ/মাংস নিয়ে গপগপিয়ে খাই, হালকা ম্যায়োনেস আর সসও দেই-সাথে লেবুর রস(স্বাদের জন্য)।আমার মত ডায়নোসরের যদি ভাত/রুটি না খেয়ে পেট ভরতে পারে, আপনাদের না ভরার কোন কারণ নেই।
এই তো গেল ভাতের কথা, হাউ এবাউট সুগার?
চিনি শুধু বিক্রমপুর মিষ্টান্ন ভান্ডারের মিষ্টিতেই থাকে না- প্রেমিকার চুমু ছাড়া খেতে মিষ্টি লাগে এমন সব কিছুতেই থাকে। আপেল, গাজর, বীট ইত্যাদিতে এর পরিমাণ অনেক, তবে এই চিনি অত বেশি ক্ষতিকর নয়। যদি মাথা ঝিমঝিম করে, দুর্বল লাগে- গপাগপ রসমালাই আর জিলাপি না গিলে একটা আপেল বা কয়েক টুকরো আনারস খান- দেখবেন ভাল লাগছে।
আর হ্যাঁ, ভাতের বদলে আলু খেতে যাবেন না- আলু হচ্ছে স্টার্চ জাতীয় সবজি, যত খাবেন তত ফুলবেন- এর কাজও ওই কার্ব আর সুগারের মতই।
আপনার শরীর কার্ব থেকে এনার্জি নেয়, কার্ব রিপ্লেস করে প্রোটিন আর শাকসবজি দিলে সেখান থেকে নেবে, সেই সাথে দেহে জমে থাকা ফ্যাট ভেঙে সেখান থেকে নেবে।
আমরা তো এটাই চাই, তাইনা?
তৃতীয় দিনের লড়াই চালিয়ে যান, হ্যাপি ডায়েটিং!!
রেফারেন্সঃ
১)”গুড ক্যালরি ব্যাড ক্যালরি”-গ্যারি টাউবেস
২) “হোয়াই উই গেট ফ্যাট”- গ্যারি টাইবেস
৩) “ইট ফ্যাট গেট লীন”- মার্ক হাইমেন
বিঃদ্রঃ লেখায় কোন ভুলত্রুটি দেখলে নির্দ্বিধায় দেখিয়ে দিন। বিশ্বজিৎ ভাই একটা বিশাল ভুল ধরিয়ে দিয়েছেন। তাঁকে কৃতজ্ঞতা।
প্রথম প্রকাশিতঃ ১০ই মার্চ, ২০১৬