“ম্যাজিস্ট্রেট স্যার অর্ডার দিছেন, গন্ডগোল থামাইতে হইবো, বুঝলা মিয়ারা?”
সাব ইন্সপেক্টর কামালউদ্দিন তার অধ:স্তন কন্সটেবলদের বলছিলেন| ত্রিশ বছরের চাকুরি, এই সামনের মার্চে রিটায়ার করে দেশে যাবেন| আর মাত্র সপ্তাহ দুয়েক|
কি মুশকিল, এর মধ্যে ডিউটি পড়েছে ঢাকা মেডিকেলের সামনে| অভিজ্ঞতা থেকে জানেন, আজ এখানে একটা গণ্ডগোল না হয়েই যায়না| সরকারের নিমক খেয়েছেন, সরকারী আদেশকে দৈববানীর মতই পালন করে এসেছেন সারাজীবন|সিনিয়র অফিসাররাও তাই সবচেয়ে ঝামেলার জায়গাটাতেই ডিউটিতে পাঠিয়েছে তাকে|
এই রে! মিছিল দেখি এদিকেই আসছে! “অন গার্ড, পজিশন নেও সবাই, সাবধান!!” – কামালউদ্দিনের চিৎকারে সব কজন কন্সটেবল টানটান হয়ে দাড়ালো| বন্দুক সোজা মিছিলের দিকে|
“রাষ্ট ভাষা বাংলা চাই!” “উর্দু ভাষা মানি না, মানব না”-মিছিলটা আরো এগিয়ে আসছে|আরে যন্ত্রণা! ভাষা নিয়ে এত লাফানির কি আছে,একটা হইলেই তো হয়! এইটার জন্য একশ চুয়াল্লিশ ধারা ভাংতে হবে?? মরার ভয় নাই তোদের!?! প্রমাদ গুনলেন কামালউদ্দিন।
“স্যার, কি করুম???” কন্সটেবল ফারুক জিজ্ঞাসা করল| বাচ্চা ছেলেটা, দুদিন হয়নি চাকুরিতে এসেছে কিন্তু দারুন চৌকশ| ঝামেলার সময় মাথা ঠান্ডাও রাখতে পারে খুব| মিছিল বিপজ্জনকভাবে কাছে চলে এসেছে, এখন শুধু অর্ডারের অপেক্ষা|
কামালউদ্দিন মিছিলটার দিকে তাকালেন, তারপর হাতের তালু দিয়ে ভ্রু আর কপালে জমে থাকা ঘাম মুছে নিলেন| মিছিলের সবচাইতে সামনে লম্বা, পাঞ্জাবি পরা একটা ছেলেকে দেখা যাচ্ছে| হ্যাংলা পাতলা এই ছেলেটাই হাতের মুঠি তুলে নেতৃত্ব দিচ্ছে মিছিলের। ওর ঠিক মাথা বরাবর ইশারা করে তর্জনী তুলে বললেন- “ফায়ার!”
গুলি করার সাথে সাথে পুলিশের দলটি অবাক হয়ে দেখল, ছেলেটির বুক আর মাথা থেকে রক্তের বদলে অক্ষর বেরুচ্ছে- অ আ ক খ বৃষ্টির মত বেরিয়ে ঢেকে দিচ্ছে নীল আকাশ, সবুজ গাছ আর পীচঢালা কালো রাস্তা|
আর তার তেষট্টি বছর পর বাংলাদেশে জন্ম নেয়া একুশ বছরের কোন এক বাংগালী তরুনকে তার প্রিয়তমা কোন এক বংগ ললনা জিজ্ঞাসা করল, “ওয়াসসাপ, হানি! ক্যান ইউ টেল মি হোয়াট ইজ দিস প্রভাতফেরী শিট?”
প্রথম প্রকাশিতঃ ২১শে ফেব্রুয়ারী, ২০১৫