ভয়ের প্রবৃত্তি আদিমকালে মানুষের নিরাপত্তাহীনতা থেকে এসেছে। একসময় মানুষ আলোর ব্যবহার জানত না, প্রকৃতির কাছে সে ছিল সম্পূর্ণ অসহায় । অন্ধকারে শিকারী পশুরা দেখতে পেত, ফলে অন্ধকারের অন্ধ মানুষ সহজ শিকারে পরিণত হত।
অন্ধকারের এই ভয় মানুষের স্মৃতিতে এখনো রয়ে গিয়েছে। ভয়ের কারণগুলো লোপ পেলেও এই ভয়ের স্মৃতি তার ডিএনএ তে রয়ে গিয়েছে। আর এই স্মৃতির উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে হরর ইন্ডাস্ট্রি, হাজার হাজার গল্প, উপন্যাস, সিনেমা। ব্রাম স্ট্রোকারের ড্রাকুলা তো বিশ্বসাহিত্যের মর্যাদা পেয়েছে( এই বইটা কিন্তু আসলে রূপক বই, কলোনিয়ালিজমের বিরূদ্ধে লেখা)।
ভূত এফএম এমনই একটি চমৎকার অনুষ্ঠান। এখানে মানুষ তার ভৌতিক অভিজ্ঞতা শেয়ার করে গভীর রাতে, গা শিরশিরে অনুভূতি নেয়। আমার সবচাইতে প্রিয় একজন মানুষ এই অনুষ্ঠানটি শোনে। আজ সে বহুদূরে, আমাদের জীবনস্রোত সম্পূর্ণ আলাদা। তবুও, যখনই ভূত এফ এম এর সময় হয়, সুদূর টোকিওতে বসে মনের ভেতর মুচকি একটা হাসি ফুটে ওঠে আমার। জানি, হাজার মাইল দূরে বসে ও শুনছে এটি, শুধু ভয় পেয়ে কান্নাকাটি করার পর ফোন করে ওকে সাহস দেবার জন্যে আমি নেই। আহ, what a wicked life it is!
মনে পড়ে, প্রথম রেইডে যাবার আগে ফোন করেছিলাম, আমি না ফেরা পর্যন্ত সারারাত জেগে ছিল ও। বলেছিলাম, চোর ডাকাতের পাশাপাশি সুযোগ পেলে একটা দুটা ভূতপ্রেতও ধরে আনব ওর জন্য, শোকেসে সাজিয়ে রাখবে। শুনে কি রাগারাগি! হ্যাঁ, ভূতপ্রেত নিয়ে দুষ্টুমি করতে নেই!
আমাকে খুব শখ করে বলেছিল, একদিন আমার সাথে মুভি দেখবে। হাসতে হাসতে বলেছিলাম, “চল, হরর মুভি দেখি”।
“কেন?”
“না মানে, ভয় পেয়ে আশেপাশে কাউকে না পেয়ে আমাকেই জড়িয়ে…”
রেগেমেগে কথা বলাই বন্ধ করে দেবার অবস্থা!
ভূত এফ এমের স্মৃতি তাই আমার কাছে ভৌতিক নয়, রোমান্টিক। সেই সাথে খানিকটা বেদনার, খানিকটা দীর্ঘশ্বাসের।
I don’t cry because it’s over. I smile, because it happened.
প্রিয় পাঠক, এবার কাজের কথায় আসি। ভূতের অনুষ্ঠান দেখে ভয়মিশ্রিত আনন্দ পেতে কোন ক্ষতি নেই। নানাবাড়িতে সব কাজিনরা মিলে Sinister দেখে আমারই আত্মারাম খাঁচাছাড়া হবার দশা! কিন্তু মুশকিল হয় যখন এগুলোকে আপনি সত্যি ভাবা শুরু করেন।
কল্পকাহিনীকে সত্যি ভাবা শুরু করামাত্র আপনি কুসংস্কারকে প্রশ্রয় দেয়া শুরু করলেন, নিজের মনকে পঙ্গু বানানোর পথে চলা শুরু করলেন। কোন কোন দেশের বাচ্চাকাচ্চারা ভূতের ভয় আমাদের চাইতে কম পাবার কারণ, তাদের বাবা মা ছোটবেলায় উদ্ভট সব ভূতপ্রেতের গল্প বলে কচি মনে অযৌক্তিক ভয়ের বীজ বপন করেনা। যত যুক্তিবাদীই হোন, শৈশবের ভীতি কাটিয়ে ওঠা অলমোস্ট নেক্সট টু ইমপসিবল।
একজন বাবা মা-ও যদি এ লেখাটি পড়েন, আজ থেকে সন্তানদের ভূত প্রেতের গল্প বলা বন্ধ করুন।
ইয়ে, বিকল্প হিসেবে পুলিশের ভয় দেখাতে পারেন!!
প্রথম প্রকাশিত: ৪ঠা অক্টোবর, ২০১৫