(লেখাটি শুধুমাত্র তাঁদের জন্য, যাঁরা মনে করেন ইংরেজিতে তাঁরা দুর্বল। সবল মানুষদের এই লেখা পড়ার কোন দরকার নেই, শুধু শুধু সময় নষ্ট)
archipelago শব্দটির অর্থ দ্বীপপুঞ্জ, এই শব্দটি আমি শিখেছিলাম ক্লাস নাইনে থাকতে। কিভাবে জানেন? বিখ্যাত ইংরেজি ম্যাগাজিন “পেন্টহাউস” এর একটি চুরি করা কপি কোন এক দুষ্টু ক্যাডেট লুকিয়ে চুরিয়ে কলেজে নিয়ে এসেছিল। ওটায় এক অপরূপা নগ্নিকার ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জে একটি ফটোশ্যূটের ছবি ছিল। নীচে লেখা ছিল- ফায়ার অন দা আর্কিপেলাগো।
সেই উনিশ শ নিরানব্বই সালে শব্দটি শিখেছি- আজও ভুলিনি, মনে হয় না এ জীবনে ভোলা যাবে।
এই ছোট্ট ঘটনার মধ্যেই যে কোন নন-নেটিভ ইংরেজী স্পীকারের ইংরেজি শেখার যাদু লুকিয়ে আছে। কি বলুন তো?
নাহ, যা ভাবছেন তা না- ব্যাপারটা হচ্ছে আগ্রহ। আপনার যদি আগ্রহ থাকে, এই ইন্টারনেটের যুগে ইংরেজি শেখাটা আপনার জন্যে কোন ব্যাপার না।
শুরুতেই বলে নিই, আমি বাংলা মিডিয়ামের ছাত্র- জীবনে কখনো ইংরেজিভাষী দেশে পড়াশোনা করিনি।
ইংরেজি আমার মাতৃভাষা নয়, ইংরেজি বলতে না পারার কারণে থাইল্যান্ডের মত নন-ইংলিশ স্পীকিং দেশের কাছ থেকেও ইন্টার্নশীপ থেকে বঞ্চিত হয়েছিলাম মাত্র বছর দশেক আগে। তবে দীর্ঘদিনের ঘষামাজার একটা সুফল আছে- নেটিভ স্পীকার না হয়েও কাজ চালাতে পারি।
সাহস করে তাও জ্ঞান দেবার স্পর্ধা করছি কারণ এই ভাঙাচোরা ইংরেজি দিয়েও আইইএলটিএস এর বাধা ভালোভাবেই পার হয়েছিলাম।স্পীকিং এ সাত, রাইটিং এ সাত, লিসেনিং এ সাড়ে আট আর রীডিং এ সাড়ে আট।ওভারঅল ব্যান্ড স্কোর আট।
বাবার বন বিভাগের চাকুরির সুবাদে ছোটবেলা কাটিয়েছি পাহাড়ে পাহাড়ে, ওখানে যে খুব ইংরেজি শিক্ষার ব্যবস্থা ছিলো তা না। এর মানে হচ্ছে, ইংরেজি মিডিয়ামে না পড়ে বা বাইরে না গিয়েও খুব ভালভাবেই ইংরেজির ভিত্তিটা গড়া যায়।
প্রশ্ন হচ্ছে, কিভাবে?
প্রথম পদক্ষেপ হচ্ছে মাথা থেকে কয়েকটা ভুল ধারণা ঝেড়ে ফেলুনঃ
১) ইংরেজিতে খুব অসাধারণ কথা বলতে পারার মানে এই না যে বক্তা আইনস্টাইন আর নিউটনের রিমিক্স স্টাইলের ফাটাফাটি মেধাবী।ইংরেজি আর দশটা ভাষার মত আরেকটা ভাষা মাত্র, নিয়মিত চর্চা থাকলে নিতান্ত গাধাও তাক লাগানো ইংরেজিতে কথা বলতে পারবে। আপনার ইংরেজি উচ্চারণ দুর্বল মানে আপনি খ্যাত, গণ্ডমূর্খ- এইসব উদ্ভট, কলোনিয়াল চিন্তাভাবনা মাথা থেকে বের করুন সবার আগে।
২) ইংরেজি শিখতে গিয়ে আপনাকে ব্রিটিশ বা আমেরিকান এ্যাকসেন্ট “মারাতে” হবেনা (আমি সরি, এই ভাষাটা ব্যবহার দৃষ্টিকটূ- কিন্তু কতিপয় ইয়ো আর ডিজুস প্রজন্মের আচরণে এটা বলতে বাধ্য হলাম)। আপনি আপনার মনের ভাব আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে স্পষ্টভাবে বুঝিয়ে বলতে পারেন- এটুকুই যথেষ্ট। আমার কো-সুপারভাইজার ডক্টর এম খাঁটি বাঙালি স্টাইলে ইংরেজি বলেন- কিন্তু উনার ফিল্ডে উনাকে সারাবিশ্বের প্রথম তিন জন এক্সপার্টদের একজন বলে সম্মান করা হয়- উনার মুখের কথায় কোটি কোটি ডলারের প্রজেক্ট নিয়ে পিছে পিছে ঘোরে বিশ্বের সেরা সব বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকেরা। ভাষার দক্ষতা আর মেধা- দুইটা দুই জিনিস।
৩) জাপান, জার্মানিসহ ইউরোপের অধিকাংশ দেশে সাধারণ মানুষ ইংরেজি বলেনা, আর প্যারিসে গেলে স্রেফ না খেয়ে মরবেন। তাতে কিন্তু তাদের উন্নতি থেমে থাকেনি। ইংরেজি ভাষা নিয়ে যে ছোটলোকিপণা আমরা বাঙালিরা করি, এই ছোটলোকিপণাটাই আমাদেরকে মরমে মেরে দেয়। এ থেকে বেরিয়ে আসুন প্লিজ!
৪) বাস্তবতা হচ্ছে, ইংরেজি এখন আর কোন ল্যাংগুয়েজ নয়, এটা একটা টেকনোলজি- কম্পিউটারের মতই। এটা না শিখলে আপনি আমাদের দেশ তথা বিশ্বের পরিপ্রেক্ষিতে পিছিয়ে পড়তে পারেন- এই সম্ভাবনা উড়িয়ে দেয়া যায়না। শুধুমাত্র আগ্রহ থাকলে যে কেউ মাত্র মাস দুয়েকের মধ্যেই চোখে পড়ার মত ব্যাপক উন্নতি করতে পারবেন ইংরেজিতে।
কিভাবে, তা বলে দিচ্ছি।
প্রথম সূত্রঃ পড়ুন, পড়ুন, পড়ুন!
পেপার পড়তে ভালো লাগেনা? নীলক্ষেত থেকে আর্চি কমিকস পড়ুন, ইন্টারনেটে মার্ভেল কমিকসের ফ্রি কপি পড়ুন। ভোকাবুলারি লিস্ট মুখস্ত করতে গেলে যত সময় লাগবে, তার চেয়ে অনেক সহজে শব্দ এবং বাক্য গঠন আপনার আয়ত্তে আসবে। ভারী ভারী ইংরেজি লেখা পড়তে বোরিং লাগে? ইংরেজি আদিরসাত্মক গল্প “লিটারোটিকা” পড়ুন! দশটা ভালো লাইন পড়ার পর একটা ভালো লাইন আপনি অটোমেটিকালি লিখতে পারবেন। আর ইয়ে, লিটারোটিকা পড়তে পড়তে ফাঁকে ফাঁকে টাইমস, ইকোনমিস্ট কিংবা আমাদের ডেইলি স্টার- এইগুলো পড়তে ভুলবেন না!
দ্বিতীয় সুত্রঃ ফেসবুকে শিখুন ইংরেজি!
আমার ইংরেজি লেখার হাত খোলার পেছনে অন্যতম অবদান ফেসবুকের চ্যাটিং। অভ্র সম্পর্কে জানার আগে ইংরেজিই ছিলো ভরসা, আর টাকলামি সেই অভ্রের আগের যুগ থেকেই দেখতে পারতাম না। ভুলভাল হলেও ইয়েস, নো ভেরি গুড করে করে ইয়াহু মেসেঞ্জারের যুগ থেকেই ইংরেজিতে চ্যাট করতে চেষ্টা করতাম- করতে করতে একদিন দেখি মোটামুটি শুদ্ধ ভাষায় লেখা শিখে গিয়েছি!
ভুল হোক, ঘাবড়াবেন না। আমাদের ইংরেজি বইতে লেখা ছিলো, ইউ উইল সারটেইনলি লার্ন থ্রু মিসটেইকস! ভুল করতে করতেই শিখবেন!
সারা দুনিয়ার গ্রামার পড়া লাগবেনা- পার্টস অফ স্পীচ, ভয়েস , টেনস আর ন্যারেশন- এই চারটা জিনিস শিখুন, কেল্লা ফতে!
তৃতীয় সূত্রঃ ইচ্ছেমত মুভি দেখুন!
ভার্সিটি লাইফে পাগলের মত মুভি দেখতাম- সাবটাইটেল নামিয়ে সেগুলোর দিকেই তাকিয়ে থাকতাম কারণ ইংরেজি উচ্চারণ বুঝতাম না। এভাবে মুভি দেখতে দেখতে আস্তে আস্তে বোঝা শুরু করলাম ইংরেজি উচ্চারণ। এখন আমেরিকান ইংরেজি , অস্ট্রেলিয়ান ইংরেজি আর ব্রিটিশ ইংরেজির ডায়ালেক্টের পার্থক্য ধরতে পারি। বাকিদের কাছে এ্টা হাস্যকর, কিন্তু আমার জন্য এই এটুকুই কম না!
.
চতুর্থ সূত্রঃ ভুলভাল ইংরেজি বলুন!
প্রতিদিন নিয়ম করে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে পাঁচ মিনিট যে কোন একটা বিষয়ের উপর চোখে চোখ রেখে কথা বলুন। যেটা হবে, প্রচন্ড অস্বস্তি লাগবে, পেটে আসবে মুখে আসবে না, শব্দ খুঁজে পানবেন না।
আমি চাই এই অনুভূতিগুলো আপনার হোক। যত সময় যাবে, এই অস্বস্তিগুলো গা সওয়া হয়ে যাবে। প্রথম দিন পাঁচ মিনিটে একটা শব্দ বলতে না পারা আপনি ঠিক দু মাসের মাথায় দুর্দান্তভাবে মনের ভাব গুছিয়ে বলতে পারবে। আমার এক হাজারের বেশি ছাত্র আর্মির আইএসএসবি পাস করেছে, আমি খুব আত্মবিশ্বাসের সাথে বলতে পারি এটা।
আমি আরেকটা কাজ করতাম, বাংলায় কোন কিছু শুনলেই সেটাকে মনে মনে ইংরেজিতে অনুবাদ করে বলার চেষ্টা করতাম। যেমন, কাজিনের বিয়েতে দুষ্ট ছেলেপেলে এক দিকে গান ছেড়েছে সালমার- “তুমি দিয়ো নাকো বাসর ঘরের বাত্তি নিভাইয়া, আমি বদ্ধ ঘরে অন্ধকারে যাবো মরিয়া”- আর আমি মনে মনে প্রাণপণ অনুবাদ করছি- “প্লিজ ডু নট সুইচ অফ দা লাইট অফ ব্রাইডাল চেম্বার, আই উইল ডাই ইন দা ডার্কনেস অফ ক্লোজড রূম”
বুঝুল ঠেলা!!!
প্রথম প্রথম পারবেন না, মাথা হ্যাং হয়ে যাবে-তবে এই অস্বস্তিটুকু দু মাস ধরে চালিয়ে যান, দেখেন কি হয়!!!
পঞ্চম সুত্রঃ
ইয়ে মানে, এইটা ঠিক সূত্র না- তবে অতি কার্যকর একটি পদ্ধতি। উপরের পদ্ধতিগুলোতে দুই মাসে যা শিখবেন, এই পদ্ধতিতে দুই সপ্তাহে সেই জ্ঞান লাভ হবে।
আমার প্রথম “বান্ধবী” ছিলো ইংরেজি মাধ্যমের- ওর খুব কিউট করে ইংরেজি বলাটাও ওর প্রতি মুগ্ধতার অন্যতম কারণ ছিল। বাইরে বাইরে বড় হয়েছে, ইংরেজি বলত পুরো নেটিভদের মত। আমি আমার খাস বাঙলা উচ্চারণের ইংরেজি আড়াই বছর ওর উপর চালিয়েছি বাংলার পাশাপাশি। আজ আমার জীবনে ও নেই, কিন্তু কৃতজ্ঞতার সাথে স্বীকার করি, ও আমার জীবনে না এলে এত সহজে আইইএলটিএস এর বৈতরণী পার হওয়া হত না!
প্রিয় “এস এইচ”, যেখানেই থাকো, সুখে থাকো!
আপনাদের কারও যদি প্রেমিক/প্রেমিকা এরকম খুব ভালো ইংরেজি জানে আর আপনার অবস্থা যদি হয় আমার মত, দয়া করে এই সুযোগের পূর্ণ সদ্ববহার করুন! প্রেমিক/প্রেমিকা থাকবে কিনা জানিনা, কিন্তু তাদের কাছ থেকে শেখা ইংরেজি আপনাকে জীবনের দৌড়ে এগিয়ে দেবে এটা নিশ্চিত!
হ্যাপী লার্নিং!
প্রথম প্রকাশিতঃ ১২ই জুন, ২০১৫