অক্সফোর্ড জীবতত্ত্ব যাদুঘরে ঢুকেই সোজা নাক বরাবর এগিয়ে ডায়নোসরের কঙ্কালের দঙ্গল পেরিয়ে দেখা হল মহাবিজ্ঞানী স্যার আইজ্যাক নিউটনের সাথে। চিবুকে হাত রেখে নিমগ্নচিত্তে মহাকর্ষ নিয়ে চিন্তা করছেন তিনি, মিউজিয়ামের কোলাহল তাঁকে বিন্দুমাত্র স্পর্শ করছেনা।
তাঁর পাশেই কোমরে দু হাত বেঁধে দাঁড়িয়ে আছেন চার্লস ডারউইন। তাঁর প্রবর্তিত বিবর্তনবাদ পাল্টে দিয়েছে মানব সভ্যতার ইতিহাস, কলম বনাম চাপাতির লড়াইকে উস্কে দিয়েছে দক্ষিণ এশিয়ার ছোট্ট একটি দেশে। কাছে গিয়ে হ্যালো স্যার বলে ডাক দিলাম, পাত্তাও দিলেন না।
মহামতি গ্যালিলিও আছেন তার পাশের স্তম্ভে, হাতে কম্পাস নিয়ে কি যেন ভাবছেন। “পৃথিবীও ঘুরছে, এটা স্থির নয়” এই সত্য বলার কারণে নির্মম নির্যাতন সইতে হয়েছিল তাঁকে- ভাবলাম আমার মাধ্যমে উত্তরা থানায় একটা মামলা রুজু করবেন উনি। কিন্তু কিসের কি, উনি আছেন উনার হিসেব নিয়ে!
এর পাশের জনের নাম ইউক্লিড, জ্যামিতির মাস্তান লোক। জ্যামিতিতে প্রতি বছর বংশদণ্ড খেতাম, ইচ্ছে করছিল এই চাচ্চুর হাত থেকে কাগজ কলম ছিঁড়ে পুড়িয়ে দেই। কি মুশকিল, কাগজও পাথরের তৈরি যে!
সবার ডান কোণে মহামতি লিবনিজ, ক্যালকুলাসের প্রকৃত জনক। কি এক অভিমানে আকাশপানে চেয়ে আছেন। জীবদ্দশায় নিউটনের চক্রান্তে চরম অপমানিত হয়েছিলেন, বিতাড়িত হয়েছিলেন নিজের অবস্থান থেকে। সে অবস্থা এখন আর নেই, সবাই জানে আসল ঘটনা। আমার না ভীষণ মন খারাপ হল তাঁকে দেখে, মহাপুরুষরাও তবে মানবীয় দোষত্রুটির ঊর্ধ্বে নন!!
+দর্শনার্থীদের মধ্যে শিশুরাই বেশি। এরা আসছে, দেখছে, জানছে।
হীরক রাজার দেশে সিনেমায় দেখেছিলাম,
এরা যত বেশি পড়ে,
তত বেশি জানে
তত কম মানে।
শুকনো বইয়ের চাইতে লক্ষগুণ আকর্ষনীয় এই যাদুঘর আজকের ব্রিটিশ শিশুদের চেতনার ভিত গড়ে দিচ্ছে, যা দেখে ঈর্ষায় জ্বলছি আমি।
আচ্ছা, জেলা পর্যায়ে ছোট করে বিজ্ঞান যাদুঘর গড়ে তোলা কি একেবারেই অসম্ভব? যেখানে মফস্বলের শিশু সপ্তাহ শেষে বেড়াতে যাবে, আর তাদের ভেতর থেকে এক সময় বেরিয়ে আসবে আমাদের নিউটন আর গ্যালিলিওরা?