কোন নন ফিকশন বই এরকম মন্ত্রমুগ্ধের মত শেষ কবে পড়েছি মনে করতে পারছিনা। ইভোলিউশনারি এ্যানথ্রপলজি, বায়োলজি, সাইকোলজি, ফিজিক্স আর ইতিহাসের সমন্বয় ঘটিয়ে মানবসভ্যতার ইতিহাসকে যে স্পাই থ্রিলারের মত টান টান উত্তেজনাকর হিসেবে লেখা যায়, এ বইটি না পড়লে কল্পনাও করতে পারতাম না। বইটি আমার চিন্তাজগৎকে সমূলে নাড়া দিয়েছে, চিরপরিচিত পৃথিবীটাকে দেখার দৃষ্টি পুরোপুরি পাল্টে দিয়েছে। এ বইটার বাংলা অনুবাদ খুব, খুব জরুরী এবং প্রতিটি আঠারো বছর এবং তদোর্ধ্ব নাগরিকের এটি পড়া উচিত।
একেবারেই আউটরেজিয়াস বা উন্মাদনাপূর্ণ বেশ কিছু দাবী কিছুক্ষণ পর পর করা হয়েছে বইটির পাতায় পাতায়, আর এরকম শ খানেক উদ্ভট দাবীকে সুন্দরভাবে সাজিয়ে গুছিয়ে বর্ণনা করা হয়েছে সৃষ্টির শুরু থেকে দুহাজার পনের পর্যন্ত মানবজাতির সংক্ষিপ্ত ইতিহাস। মানব জাতি কিভাবে নিজেদের টিকিয়ে রাখতে উদ্ভাবন করল নানারকম মিথোলজির, কিভাবে কমন মিথোলজিতে বিশ্বাস লক্ষ লক্ষ মানুষকে এক ছাতায় রেখেছে – এ বইটি না পড়লে দেখতে পেতাম না। এ বইয়ের মতে, আমেরিকান ডিক্লেয়ারেশন অফ ইন্ডপেন্ডেন্স এরকম একটি মিথোলজি, যেটাতে বিশ্বাস করে সব আমেরিকান এক ছাতার নীচে আছে।
বইটির সর্বশেষ চ্যাপ্টারের একটা দাবীর কথা বলি:
মানব সভ্যতার ভবিষ্যত ইভোলিউশনারি থিওরিতে নয় বরং ইন্টেলিজন্ট ডিজাইন থিওরিতে নিহিত। এটা পড়ে যখন বইটি ফেলে দিচ্ছিলাম বাতিলের খাতায় তখনই পড়লাম ব্যাখ্যা:
সমগ্র বিশ্বের সারা প্রান্ত জুড়ে ডারউইনের ন্যাচারাল সিলেকশন মুখোমুখি হচ্ছে নতুন এক চ্যালেঞ্জের। সমস্ত প্রাকৃতিক নিয়মকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে ল্যাবে তৈরি হচ্ছে নতুন বৈশিষ্ট সম্পন্ন প্রাণীকূল। দুহাজার সালে ব্রাজিলিয়ান বায়ো আর্টিস্ট এডোয়ার্ডো কাক (Eduwardo Kac) ঠিক করলেন, সবুজ রঙের ঝকমকে (fluorecent) চামড়ার খরগোশ বানাবেন ল্যাবে। ফ্রেঞ্চ বায়োলজিস্টরা এগিয়ে এল এবং অল্প সময়েই এই ডিজাইনের খরগোশ তৈরি হয়ে গেল, ন্যাচারাল সিলেকশনকে পাশ কাটিয়েই!
আজ খরগোশের হচ্ছে, ভেড়ার হয়ে গিয়েছে, এভাবে এক সময় মানুষ নিজেই ডিজাইন করবে পরের প্রজন্মের মানুষদের।
সীমিত আয়ুর ফলে বিজ্ঞানের উৎকর্ষ দেখে যেতে পারবনা এ আমার বড় আফসোস।
তবে এ বইটি মোটামুটি আইডিয়া দেয় আমরা কিভাবে, কোথায়, কতদূর এসেছি।
মানবজাতির ইতিহাসের প্যাটার্ন এবং সাইকোলজি বুঝতে স্টার্টার হিসেবে বইটা অতুলনীয়।
এ বই পড়ার ফলে যেভাবে আপনার চোখ খুলবে, তা আপনাকে এগিয়ে নেবে বহুদুর!
ইটস আ মাস্ট রীড!