প্রাচীন ভারতীয় দার্শনিকগণ মানব অস্তিত্বের তিনটি মূল উদ্দেশ্য বর্ণনা করেছেন: জীবন ধারণের জন্যে নিরাপত্তা, সম্পদ, অন্ন, বস্ত্র ইত্যাদি মিলিয়ে প্রয়োজন “অর্থ”, বংশবিস্তার এবং ভোগবিলাসের জন্য “কাম” এবং ন্যায়পরায়ণভাবে জীবনযাপনের জন্যে “ধর্ম”।
পণ্ডিত বাৎস্যায়ন তাঁর ক্লাসিক টেক্সট “কামসূত্রে” বংশবিস্তার এবং আনন্দ উপভোগে মানবচেতনাকে ফুটিয়ে তুলেছেন সে সময়ের সুনির্দিষ্ট আচার আচরণের নিখুঁত বর্ণনায়।
প্রচলিত ধারণা ভুল, কামসূত্র শুধুমাত্র সার্কাসের বানরের মত বিচিত্র সব পজিশনে পরিপূর্ণ সেক্স ম্যানুয়াল নয়। এ বইটি আনন্দ বা Pleasure লাভে মানুষের যে উদগ্র বাসনা, সেটিকে শৈল্পিকভাবে ফুটিয়ে তুলেছে।
একটা উদাহরণ দেই, আড়াই হাজার বছর আগে বাৎস্যায়ন বলেছেন-
” সঙ্গিনীর প্রতি প্রেমপূর্ণ আচরণ করাই একজন পুরুষের কর্ম এবং ধর্ম। পুরুষ তার সঙ্গিনীর প্রতি উদাসীন বা অতি আক্রমণাত্মক হবে না, এতে পাশবিকতা প্রকাশ পায়”
প্রিয় পাঠক, এই দুহাজার পনের সালে ম্যারিটাল রেইপ বা স্বামীর উদাসীনতা কতশত অপরাধের জন্ম দেয় চিন্তা করুন তো! অথচ আড়াই হাজার বছর আগেই বাৎস্যায়ন এই Manual of Love লিখে গিয়েছিলেন!
সময়ের সাথে সাথে এই বইয়ের অনেক কিছুই এখন আর প্রাসঙ্গিক নয়, তবে বইটির মূলভাব প্রত্যেক প্রেমিক প্রেমিকার জানা উচিত বলে আমি মনে করি।
বইটি পড়লে চমৎকৃত হবেন কি নিখুঁতভাবে প্রেমপূর্ণ আচরণ এবং প্রেমাস্পদের চরিত্র বর্ণনা করা হয়েছে সেটি দেখে।
আর যাঁরা নাম দেখেই এক হাত ফোন আর আরেক হাত উত্থিত প্রেমযন্ত্রে রেখে গুপ্তবাবুর পুস্তকপাঠ করতে চাইছিলেন, তাঁদের জন্যে হতাশা।
এক লেখক বলেছিলেন, চারিদিকে এত মানুষ কিন্তু প্রেমাস্পদের বড় আকাল!
কামসুত্র এই হতাশা দূর করতে আজও কার্যকর, যেমনটি ছিল হাজার বছর আগে।
লন্ডনের শেষ রাতে নিজেকে এ বইটি উপহার দিলাম স্কুবস বুকশপ থেকে!