আবেগ থেকে বেরিয়ে বাস্তববাদী হতে যেসব বই পড়বেন

বাস্তববাদী হতে এই বইগুলো পড়ুন!

#বাস্তববাদী_বই

একটা বইপড়ুয়া গ্রুপে একজন প্রশ্ন করেছে- “কোন বইগুলো পড়লে আবেগ ছাপিয়ে বাস্তববাদী হতে পারব?”

ভদ্রলোক চেয়েছেন বইয়ের সাজেশন, অথচ উনাকে দেয়া হয়েছে তৃতীয় শ্রেনীর সব কৌতুকপূর্ণ উত্তর।

আমি নিজে প্রচন্ড আবেগপ্রবন মানুষ। আমার জীবনে এই অতিমাত্রায় আবেগের কারণে শিকার হয়েছি বহু যন্ত্রনার। আবেগটা বাদ দিতে পারিনাই বটে,কিন্তু আবেগের বশবর্তী হয়ে উল্টাপাল্টা সিদ্ধান্ত নেয়ার হার বেশ খানিকটা কমেছে। মনের আবেগ মনের ভেতর চেপে রেখে নির্মমভাবে ক্ষতিকর প্রাণীদেরকে নিজের জীবন থেকে ছেঁটে ফেলতে শিখেছি।

এটা হয়েছে অভিজ্ঞতা এবং পুস্তক পাঠের সমন্বয়ে। অভিজ্ঞতা তো কেউ কাউকে ধার দিতে পারেনা,তবে যেসব বই পড়ে মেন্টাল রিজলভ বা মানসিক দৃঢ়তা অর্জনে কিছুটা সক্ষম হয়েছি তার একটা লিস্ট এখানে দিচ্ছি। ব্লগে বইগুলোর বিস্তারিত রিভিউ দেব পরবর্তীতে।

এক) দি গডফাদার, দি লাস্ট ডন, দি সিসিলিয়ান, ফুলস ডাই- মারিও পুজোর এই ফিকশনগুলো সেই আঠারো বছর বয়েসী তরুণকে প্রথম নির্মম বাস্তবতার পাঠ শিখিয়েছিল। নীতিকথা বনাম বাস্তব জীবনের পার্থক্য শিখতে হলে মারিও পুজোর বই পড়তেই হবে।

দুই) মেডিটেশনস- রোমান সম্রাট মার্কাস অরেলিয়াসের এই বইটা হাতে এসেছিল জীবনের কঠিনতম একটা সময়ে।জীবনের উত্থান পতন উভয় সময়ে নিজের মানসিক শক্তি ধরে রাখার কথা বলেছেন এই রোমান সম্রাট। স্টয়িক ফিলোসফির এই ক্লাসিক বইটাকে আমার অপারেটিং সিস্টেম বানানোর চেষ্টা করছি।

তিন) দি আর্ট অফ ওয়ার- আপনি যতই সাধুসন্ত হোন না কেন, প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখোমুখি আপনাকে হতেই হবে।কিভাবে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করবেন এইটা জানতে আড়াই হাজার বছরের পুরানো এই ম্যানুয়ালটি আপনার শ্রেষ্ঠ বন্ধু।

চার) দি সাটল আর্ট অফ নট গিভিং আ ফাক- মার্ক ম্যানসনের এই বইটা খুব সহজ ভাষায় স্টয়িক ফিলোসফির সারকথা তুলে ধরেছে। প্রাকটিকাল উইজডমে পরিপূর্ণ এই বইটার নাম দেখে বিভ্রান্ত হবেন না, এটা আসলেই একটা দুর্দান্ত বই- কল্পনার পৃথিবী থেকে আপনাকে বাস্তবতার মাটিতে পা রাখার জন্য এটা একটা মাস্ট রীড। সহজ ইংরেজিতে কথ্য ভাষায় লেখা, নীলক্ষেতেই পাবেন।

পাঁচ) কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্র, চাণক্য নীতি- মহামতি চাণক্য, যিনি ছিলেন ভারতের প্রথম রাজাধিরাজ চন্দ্রগুপ্ত মৌর্যের শিক্ষক- তাঁর এই বইদুটি আজও অন্ততঃ আশি ভাগ প্রাসঙ্গিক। প্রচলিত ন্যায়নীতিকথা দিয়ে আর যাই হোক রাজ্যজয় হয়না- এটা পন্ডিত চাণক্য জানতেন। বইদুটোর সমস্যা হচ্ছে ওই সময়ে নারীদের প্রতি একেবারেই পুরুষতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গী। ওই অংশটুকু উপেক্ষা করে পড়বেন, অবাক হয়ে যাবেন আজও এর প্রাসঙ্গিকতা দেখে।

“মাছ কখন কোত্থেকে কতটুকু পানি পান করে এটা বোঝা যেমন অসম্ভব, সরকারী অফিসারও কোথায় কতটুকু দুর্নীতি করেছে এটাও বোঝা অসম্ভব”।

কেউ বলবে এইটা আড়াই হাজার বছরের পুরানো উক্তি!

প্রফেশনাল এবং ব্যক্তি জীবন উভয় ক্ষেত্রেই চাণক্যের নীতি খুব শক্ত রকমের মাটি দেবে আপনার পায়ে।

ছয়) গেমস পিপল প্লে/ আই এ্যাম ওকে ইউ আর ওকে-

বাপ্পাদিত্য চক্রবর্তী নামের একজন সাবেক আইআইটি শিক্ষক আমাকে এই দুটো বইয়ের কথা বলেছিলেন।ভদ্রলোক আইপিএস অফিসারদের ক্রিমিনাল সাইকোলজি পড়াতেন। প্রতিটা মানুষের সম্পর্কই লেনদেনের উপর ভিত্তি করে গড়া(লেনদেন মানে শুধু টাকাপয়সা না,আবেগও আছে), এই লেনদেন সাইকোলজির যে শাখা চর্চা করে তাকে বলে ট্রানজেকশনাল এনালাইসিস, যা এ বইদুটোর মূল উপজীব্য। বইদুটো বছর দুই আগে পাইলে মেলা হৃদয়ঘটিত যন্ত্রনা এড়াতে পারতাম!

আপাততঃ এগুলো পড়ুন!

Comments

comments