মেয়েদের সেলফ ডিফেন্স প্রস্তুতিঃ পর্ব-১

পহেলা বৈশাখের প্রস্তুতি

প্রিয় পাঠিকাগণ,

পহেলা বৈশাখের সপ্তাহ দুয়েক আগে কিছু কাজের জিনিস শিখিয়ে দিই। বাংলাদেশের সমাজ যদি চিনে থাকেন, জেনে নিন, ভীড়ের মধ্যে আপনার শ্লীলতাহানী করতে ইতোমধ্যেই তৈরি হচ্ছে বরাহের দল। যখন এধরণের কিছুর শিকার হবেন, কেউ আপনাকে সহায়তা করবেনা বলেই ধরে রাখুন। কাউকে এগুলো বললে সে বরং মনে মনে সুখ নেবে বিষয়টা কল্পনা করে, এটাই বাস্তবতা।

সুখের বিষয় হচ্ছে, আপনার কাউকে দরকারও নেই।

বাংলাদেশে মেয়ে হয়ে জন্মানো মোটামুটি আজন্ম পাপ, আমি এমন কোন মেয়েকে চিনিনা যে জীবনের কোন এক পর্যায়ে যৌন হয়রানির শিকার হয়নি। বড় ধরণের কিছু না হলে কেউ ঝামেলার ভয়ে থানাপুলিশ করতেও চায়না।

উপায় একটাই, নিজের ব্যবস্থা নিজের করে নেয়া। শরীরে অপ্রীতিকর স্পর্শ পাওয়ামাত্র বিনা দ্বিধায় স্পর্শকারীকে কিভাবে পিটিয়ে হালুয়া বানাবেন এই নিয়ে আজকের পোস্ট।

12718191_1709702949306669_4059076695569946659_nমানব শরীরে তিনটা দুর্বল জায়গা যেখানে সামান্য আঘাতেই অতি বড় পালোয়ানও কুপোকাৎ হয়ে যেতে বাধ্য। এই তিনটা জায়গা হচ্ছে চোখ, অণ্ডকোষ এবং কণ্ঠনালীর নীচের নরম জায়গাটি। কয়েকটা ছবি দিচ্ছি গুগল করে, এগুলো দেখুন এবং আগামী দুই সপ্তাহ বন্ধুবান্ধব/ভাইবোন মিলে অনুশীলন করুন (অনুশীলনের সময় সতর্ক থাকবেন যাতে দুর্ঘটনা না ঘটে)।

হাত মুঠ করে অণ্ডকোষে আঘাত করতে, আঙুল দিয়ে চোখে গুঁতো দিতে বা কনুই দিয়ে পেছনে কারো তলপেটে আঘাত করতে ব্রুস লী হওয়া লাগেনা, লাগে বাসার বালিশ নিয়ে কাজিনের হাতে ধরিয়ে দিয়ে ওটার উপর পাঁচবার অনুশীলন।

বাসায় ভাই/বোন/বাবা/মা আছেন না? তাঁদের বলুন শক্ত করে বালিশ ধরে দাঁড়াতে। যে জায়গায় আঘাত করা অনুশীলন করবেন, সে জায়গায় বালিশ ধরতে বলুন যাতে আপনার করা আঘাত বালিশে গিয়ে লাগে। পুরো শক্তিতে মারবেন না প্রথমে, আগে শিখুন কিভাবে মারবেন। পাঁচবার অনুশীলন করুন আস্তে, তারপর যিনি বালিশ ধরে আছেন তাঁকে বলুন বালিশ যেন শরীর থেকে দূরে ধরে( চাইলে কোলবালিশ নিয়ে দেয়ালে ঠেস দিয়েও অনুশীলন করতে পারেন, তবে ভুলে আবার দেয়ালে মেরে বসবেন না!)

সর্বশক্তিতে আঘাত করা প্রাকটিস করুন।অতি অবশ্যই সতর্কতা অবলম্বন করবেন।

12928291_1709702942640003_4565829272409407705_nআমি রেকমেন্ড করছি নীচের পাঁচটি মুভ:

এক) কনুই দিয়ে পেছনের বদমায়েশের পেটে প্রচন্ড জোরে আঘাত।
দুই) হাত দিয়ে পেছনে দাঁড়ানো বদমায়েশের অণ্ডকোষে আঘাত।
তিন) হাতের থাবা দিয়ে চোখ/নাকে আঘাত।
চার) অণ্ডকোষ/তলপেট বরাবর হাঁটু দিয়ে আঘাত (শাড়ি পরে লাত্থি মারাটা কঠিন। জিন্স/পাজামা হলে লাত্থি দিতে সুবিধা )
পাঁচ) হাঁটু বরাবর সজোরে লাত্থি (হাঁটু উচ্চতায় বালিশ রেখে প্রাকটিস করুন)

এই মুভগুলো অথবা আপনার পছন্দ হয় এরকম যে কোন মুভ গুগল/ইউটিউব থেকে দেখে বাসায় এই দুই সপ্তাহ অন্তত প্রতিদিন দশ মিনিট করে প্রাকটিস করে নিন।

মনে রাখবেন, একজন সত্যিকারের পুরুষ কখনোই আপনার বিনা অনুমতিতে মরে গেলেও আপনাকে বাজেভাবে স্পর্শ করবেনা। যারা এটা করে, তারা তেলাপোকারও অধম, তার শরীরের সাইজ যাই হোক না কেন। আপনার সামান্য প্রতিরোধ, একটুখানি সাহস এই নর্দমার কীটগুলোর হাত থেকে আপনাকে এবং সমাজকে বাঁচাতে পারে।

নিজেকে রক্ষা করতে যতটা দরকার, সেটুকু শক্তি প্রয়োগ করতে এক বিন্দু দ্বিধা করবেন না। বাংলাদেশের( বা ভারতের) পেনাল কোডের ধারা ১০০ গুগল করুন, দেখবেন আইন আপনার সাথেই আছে।

ভীড়ে কেউ গায়ে হাত দিলে দয়া করে চেপে যাবেন না। Be Brave. Shout. Create a Scene. Fight Back.

মনে রাখবেন, চুপ থাকতে থাকতেই আজ এই অবস্থা।

Its time to fight back!!!

(আর্টিকেলে দুটো প্রশ্ন বার বার এসেছে, উত্তরগুলো সংযুক্ত করে দিলাম)

“একসাথে অনেকে আসলে কি করব? তখন কি এইটা কাজে আসবে?”

– জ্বি, আসবে। হাতের কাছে যেইটারে পাবেন ওইটারে দিয়ে শুরু করবেন। তেলাপোকার দল একা আসলেই কি একশ আসলেই কি, একটারে মাইর খেতে দেখলে বাকিগুলা পলায়ে কুল পাবেনা। এদের মাইন্ডসেট বুঝতে চেষ্টা করেন, এরা আপনার কাছ থেকে কোন প্রতিরোধ আশা করবেনা। সারপ্রাইজ দেম। আরো ভাল হয় যদি তিন চার জন একসাথে থাকেন। ওরা দল বেঁধে আসলে আপনিও দল বেঁধে প্রতিরোধ করবেন।

“এত ঝামেলা না করে পহেলা বৈশাখে বের না হলেই তো হয়”

– না, হয়না। হায়েনার দল প্রতিটা জায়গায় আছে, কয় জায়গাতে যাওয়া বন্ধ করবেন? ঈদের সময়, বাংলাদেশের খেলার সময়, নববর্ষের দিন, মার্কেটের ভীড় এমনকি রাস্তার জ্যামে- সব জায়গায় এরা লোল ফেলে শিকার খুঁজে বেড়ায়। বদমায়েশদের ভয়ে রাস্তায় বের হওয়া যাবেনা এই ধারণার সাথে নীতিগতভাবে আমি তীব্র দ্বিমত পোষণ করি। আজকে আপনি এদের ভয়ে ঘরে থাকবেন, কালকে এরা ঘরে ঢুকে আপনাকে ছিঁড়ে খাবে। ইট হ্যাজ টু স্টপ ইন দা বিগিনিং।

 

প্রথম প্রকাশিতঃ ১লা এপ্রিল, ২০১৬

Comments

comments