জাফরুল্লাহ সমগ্র

চৌধুরী জাফরুল্লা শরাফত ভাইয়ের সাথে আমার প্রথম দেখা মিরপুর স্টেডিয়ামে, বাংলাদেশ টিমের টিম সিকিউরিটি অফিসার থাকা অবস্থায়| এই লোকটা আমার কাছ থেকে মোবাইল ফোন নিয়ে আমার বাবাকে ফোন করে বলেছেন,আংকেল, আমি চৌধুরী জাফরুল্লা শরাফত, আপনি ভালো আছেন?আমার বন্ধু ইশতিয়াক সারাদিন পচায় দেখে তাকেও উনারে দিয়ে ফোন দিয়েছিলাম, ওর পুরা হার্ট এটাকের মত হয়েছিল|

এই লোকটা ভুলভাল কমেন্ট্রি দেয়, উনার ইংরেজি শুনে তিন তালা থেকে লাফ দিতে ইচ্ছা করে, মিস্টার বীনের পরে উনাকেই আমি জীবিত ব্যক্তিদের মধ্যে সবচেয়ে ফানি লোক বলে মনে করি| পুরাই একটা আইটেম!

শুধুমাত্র দুটো গুনের কারণে এই লোকটাকে আমি অন্তর দিয়ে ভালোবাসি| প্রথম কারণটা পার্সোনাল| পরিচয় হবার পরে আমার মত অভাজনেরও তিনি দুই তিনবার ফোন করে খোজ নিয়েছেন, বাসায় আর অফিসে দাওয়াত দিয়েছেন| বলে রাখি, পুলিশের বহু সিনিয়র অফিসার জাফরুল্লা ভাইয়ের ফ্যান, আমার মত জুনিয়র অফিসারকে উনার না গুনলেও চলে| এই বিনয়টুকু থেকে আমি অনেক কিছু শিখেছি|

দ্বিতীয় কারণটা উনার দেশপ্রেম| স্বয়ং ডন ব্র‍্যাডম্যানও যদি বাংলাদেশ ক্রিকেট নিয়ে বাজে কিছু বলে, আমি নিশ্চিত, জাফর ভাই উনার ভুলভাল ইংরেজি দিয়ে ডনের মায়েরে বাপ সেভেন আপ করে ছেড়ে দিবেন| সিধুকে প্রকাশ্যে অপমান করে মুখের উপর “কে এই সিধু” বলার মত বুকের পাটা সেই সময়ে যে দেখিয়েছিল সে আর কেউ না, এই চৌধুরী জাফরুল্লা শরাফত|

উনার মজার যে কয়টা ঘটনা মনে পড়ছে তার এক দুইটা উল্লেখ করি:

১) আবাহনী মোহামেডান খেলার লাস্ট মোমেন্টে আবাহনী গোল খাওয়ায় উনি স্থান কাল পাত্র ভুলে বলে উঠেছিলেন, ধুর বাল গোল হয়ে গেল…

২) মেসি বাংলাদেশে খেলার সময় উনার অমর উক্তি, “মেসি অনেকটা আমাদের আলফাজের মত খেলে..”

৩) জিম্বাবুয়ের এনকালা বল করতে আসলে জাফর ভাইয়ের সেই রেসিস্ট উক্তি (এইটা আমি নিজ কানে শুনেছি)”এনকালা, তিনি নামে কালা দেখতেও কালা..

৪) ” বাংলাদেশে রানসংখ্যা একশ তেইশ, এক দুই তিন| আমার মাধুরী দীক্ষিত অভিনীত একটি জনপ্রিয় হিন্দি গানের কথা মনে পড়ে যাচ্ছে…”

৫) “আকরাম খান ট্রাউজার খুলে আম্পায়ারের হাতে দিলেন”

৬) উনার আর খোদাবক্সের একটা ডুয়েট ছিল এইরকম:

আশরাফুল সজোরে ব্যাট চালিয়েছেন, বল ডীপ মিড অন অঞ্চল দিয়ে কোথায় চলে গেল বলুন তো খোদাবক্স?

খোদাবক্স: সীমানার বাআআআআইরে

৭) মৃধা ভাই, আমি কিন্তু হলফ করে বলতে পারি এই বলটি পায়ে না লেগে যদি বেলিমের ব্যাটে লাগত তবে কিন্তু আম্পেয়ার কিছুতেই আউট দিতে পারতেন না।

৮) জিম্বাবুয়েকে হোয়াইট ওয়াশ করার পর … ” সুপ্রিয় শ্রোতামণ্ডলী, আমি আগেই বলেছিলাম।বাংলাদেশ হোয়াইটওয়াশ করবে। আর শুধু আজকে কেন, বাংলাদেশ একদিন বিশ্বকাপ জিতবে। সেদিন হয়তো আমি থাকবো না। কিন্তু যারা আমার কমেন্ট্রি শুনছেন তারা থাকবেন। তারা বলবেন , ঐ লোকগুলো বলেছিলো ” বাংলাদেশ বিশ্বকাপ জিতবে আজ তা সত্যি হলো …

৯) ” সুপ্রিয় শ্রোতারা দর্শকদের করতালি শুনে আপনারা বুঝতে পারছেন মাঠে নামছেন মোঃ রফিক। তার কথা বলতে গেলে মনে পড়ে যায় অনেক কথা। বাংলাদেশের প্রথম জয়ে ব্যাট হাতে কিন্তু রফিক ৭৭ রান করেছিলেন। সেদিন তিনি একটি বিশাল ছক্কা মেরেছিলেন। তাছাড়াও বোলার হিসাবে সেই সার্ক ক্রিকেট ১৯৯২ সালে–আউট আ–উ–ট,মোঃ রফিক আউট।” …

১০) সুপ্রিয়দর্শকমণ্ডলী বাংলাদেশ আজ বারমুডাকে হারিয়ে সুপার এইটে খেলার গৌরব অর্জন করলো। এ জয় অনেক দিনের আশার,অনেকদিনের আকাঙ্খা অনেক বড় সম্মানেরঅনেক বিশাল অর্জন। সুপ্রিয় দর্শকআমি প্রথমে বলতে ভুলে গিয়েছিলামদুটি কথা। সাবাশ বাংলাদেশ। সাবাশবাংলাদেশ। তোরা সব জয়ধ্বণি কর। ওই নতুনেরকেতন ওড়ে পৃথিবী অবাক তাকিয়ে রয় কালবৈশাখীর ঝড়………

১১) একবার বাংলাদেশ কেনিয়ার ইম্পর্ট্যান্ট ম্যাচ চলছে। তখন টিভি নাই, রেডিও ভরসা। বৃষ্টির কারণে ম্যাচ বন্ধ। মানুষ কান লাগিয়ে রেডিওতে শুনার চেস্টা করছে মাঠের পরিস্থিতি। এমন সময় জাফুরুল্লাহ সাহেবের ভয়েস, “চমৎকার আবহাওয়া, চারদিকে বইছে সুবাতাস, কেটে গেছে মেঘ। বাংলাদেশ ক্রিকেট হতে শংকার মেঘ কেটে সুবাতাস বয়ে যাক। আর মাঠের অবস্থা হচ্ছে, এখনো অঝোর ধারায় বৃষ্টি হচ্ছে।” শেষ লাইন না শুনে যারা লাফাইছিলো ওরা শেষ লাইনটা শুনার পর গালি দেয়া শুরু করছে।

১২) ০৪ ‘সাফ ফুটবলে টাইব্রেকারে স্বাগতিক বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর পুরস্কার বিতরনীর জন্য অপেক্ষা করছিলাম টিভির সামনে। অই সময়েও জাফর উল্লাহ শারাফাত এবং খোদা বকসের ডুয়েট কমেন্ট্রি চলছিল। তো হঠাৎ ক্যামেরায় ক্লোস শটে একটি পাখি উড়তে দেখালো স্টেডিয়ামের উপর। সাথে সাথে খোদা বক্স বলে উঠলো – একটি পাখি মুক্তানন্দে উড়ে যাচ্ছে মাঠের উপর দিয়ে। জাফরুল্লাহ শারাফাত – মৃধা ভাই, পাখিটি বাংলাদেশ দলকে অভিনন্দন জানাতে অনেক দূর থেকে ছুটে এসেছেন।নিশ্চয় সেও ফুটবল ভালোবাসে ।

১৩) এবারে বল করতে আসছেন মোহাম্মদ রফিক এইমাত্র আম্পায়ার কে অতিক্রম করে বল করলেন … খাটো লেন্থ এর বল সপাটে হাঁকিয়েছেন বল চলে যাচ্ছে লং অন এবং মিড অন এর মাঝামাঝি দিয়ে সীমানার দিকে বল এর পেছনে পেছনে ছুটছেন আকরাম খান কিন্তু আকরাম খান এর গতির চেয়ে বল এর গতি বেশি থাকাই বল কিন্তু চলে গেল সোজা আআআআআ সীমানার বাইরে ৪ রান ,চোখ চেয়ে দেখার মতো মার, নয়নাভিরাম মার, উপভোগ্য মার, যাই হোক এই ৪ টি রান কিন্তু আসলো ওই মরিস উদুম্ববের ব্যাট থেকে

১৪) শান্ত যখন একবার অশান্ত হয়ে ওঠে তখন গাছের পাতার মতো উইকেট ঝরতে থাকে’!

১৫) “বল দেখেশুনে ছেড়ে দিয়েছেন এবং বোওল্ড।”

১৬) কুয়ালালামপুরের কিলাত কিলাব মাঠ থেকে আমি চৌধুরী জাফরুল্লাহ সারাফাত …!!

১৭) পুল করতে গিয়ে ভুল করে আউট হয়ে গেলেন বুলবুল!

১৮) ব্যাক পাসে ভুল পাস, বল পেলেন আলফাজ!

আপনাদের কি কি মনে পড়ছে কমেন্ট করুন প্লিজ!

প্রথম প্রকাশিতঃ ৮ই মার্চ, ২০১৫

Comments

comments