এইচ এস সি রেজাল্ট প্রসঙ্গে

আজ এইচএসসি পরীক্ষার রেজাল্ট বেরিয়েছে। (লেখাটি ৯ই আগস্ট ফেসবুকে প্রকাশিত)

আজ থেকে ঠিক বারো বছর আগে এমনই এক দিনে আমার এইচ এস সি পরীক্ষার রেজাল্ট দিয়েছিল। ঝিনাইদহ ক্যাডেট কলেজ থেকে দুহাজার তিন সালের এইচ এস সি পরীক্ষায় ক্যাডেট মাসরুফের রেজাল্ট কি ছিল জানেন?

থ্রি পয়েন্ট সিক্স আউট অফ ফাইভ, ফ্রম সায়েন্স গ্রুপ।

সায়েন্স গ্রুপ থেকে আমার ব্যাচের সবচাইতে খারাপ রেজাল্ট।

কলেজ প্রিফেক্ট ছিলাম, নিজ কলেজ ছাড়াও বাকি ক্যাডেট কলেজ গুলোতেও প্রায় সবাই চিনত আমাকে, আন্ত: ক্যাডেট কলেজ প্রতিযোগিতাগুলোর কারণে।
কোচিং এ ভর্তি হবার পর খুব একটা মিশতাম না বন্ধুদের সাথে, পাছে রেজাল্ট জিজ্ঞাসা করে বসে!

নিজের চাইতেও ভালবাসতাম নিজের কলেজকে, এর ন্যূনতম বদনাম সইতে পারতাম না। আমার ক্যাডেট কলেজে পড়া নিয়ে ঈর্ষা কাজ করত কোন কোন আত্মীয়ের ভেতরে। তারা মাকে ফোন করে কথা শোনাত, ” ক্যাডেট কলেজে গিয়ে আপনার ছেলেটা নষ্ট হয়ে গেল ভাবী”

কতই বা বয়েস ছিল, আঠার এর মত। ক্যাডেট কলেজের প্যারেড গ্রাউন্ড দাপিয়ে বেড়াত যে ছেলেটি, যার কমান্ডে মুখরিত হত জেসিসির সবুজ প্রাঙ্গন, কলেজের অপমানে সেই ছেলেটি দরজা বন্ধ করে কাঁদত।

মা বাবাও মানুষ, তাঁদেরও ধৈর্যের সীমা আছে। দু একদিন কাঁদতে কাঁদতে বলেই ফেলতেন, “কি অপরাধ করেছিলাম যে তোর জন্য এত জবাবদিহি করতে হবে আমাদের?”

প্রচলিত বাংলাদেশী সমাজের প্রতি আমার বিতৃষ্ণার শুরু তখন থেকেই। এ সমাজ আমাদেরকে অসহায়ের প্রতি সহানুভূতি দেখাতে শেখায় না।

পারস্যে একটা প্রবাদ আছে। “যখন কোনও অন্ধ লোক দেখবে, তাকে লাত্থি মারো। খোদা তো তাকে দয়া করেননি, তুমি কেন করবে?”

এই প্রবাদটা বাংলাদেশের চাইতে ভালভাবে আর কোথাও মনে হয়না মানা হয়।

অমুকের ছেলে রেজাল্ট খারাপ করেছে? এই তো সুযোগ, শোনাও কথা আচ্ছামত, মেটাও মনের ঝাল।

আচ্ছা, এই কাজগুলো যারা করেন, তারা কি এক বারও ভেবে দেখেন না আপনাদের আচরণ ওই বাচ্চা ছেলেটার মনে কি ভয়াবহ প্রভাব ফেলে? কিসের রক্ত আপনাদের গায়ে,মানুষ না সাপের?

আমার বিপদের সময় যারা যারা আমাকে, আমার বাবা মা কে অপমান করেছিল তাদের প্রত্যেককে আমি মনে রেখেছি। পুলিশে ঢোকার পর এরা যখন কারণে অকারণে আব্বু আম্মুর কাছে ধর্ণা দেয়, আমি শুধু হাসি। দু ফোঁটা অশ্রুও জমে চোখের কোণে, আল্লাহ পাকের প্রতি কৃতজ্ঞতায়।

সারাজীবন আমি হারুপার্টির দলে ছিলাম, আজও তাই। এ লেখাটি তাই এইচএসসি তে গোল্ডেন ফাইভ না পাওয়া ছেলেমেয়েগুলোর জন্য, যাদের কোমল হৃদয় এ মুহূর্তে বিষাক্ত বাক্যবাণে জর্জ্বরিত। আহারে, কি কঠিন বাস্তবতাই না দেখছে ওরা!

ভাইয়া আর আপুরা, বিশ্বাস করো, এই কষ্ট সাময়িক। যারা আজ তোমাকে, তোমার বাবা মা কে বলছে যে তোমার দ্বারা কিচ্ছু হবেনা- এই ব্যাটা আর বেটিরা কিস্যু জানেনা, ট্রাস্ট মি। They know NOTHING about life.

সামনে এ্যাডমিশন টেস্ট, ওটায় সর্বশক্তি নিয়োগ করো। তবে ওটাকে আবার এত বেশি গুরুত্ব দিওনা যে প্রেশারে তুমি ভেঙে পড়ে যাও।

Do your best, God will do the rest.

ক্রিকেটে যেমন, জীবনেও তাই- কোনও লড়াই-ই শেষ লড়াই না।

যো ভি হো, কাল ফির আয়েগা। যাই ঘটুক না কেন, আগামীকাল নতুন একটি দিন। শুরু করার নতুন একটা সুযোগ। Its the first day for the rest of your life.

এ লেখাটি কোন এইচ এস সি পরীক্ষার্থী যদি পড়ে থাকো, হতাশার বিষকে সাহসের ব্লটিং পেপার দিয়ে শুষে ফেলে শুরু করো নতুন লড়াই।

যে বাবা/ মা / বড়ভাই/ মামা / বোন এ লেখাটি পড়ছেন, আমার একটা অনুরোধ রাখবেন?

আপনার গোলডেন ফাইভ না পাওয়া ছোটভাই/ বোন/ ভাগ্নে/ ভাতিঝিকে ফোন করে যাস্ট দু মিনিট একটু সাহস দেবেন ?

বিশ্বাস করুন, আপনার একটু মিষ্টি কথা – অল্প একটু আদর আর উৎসাহ এই কঠিন সময়ে ওর জীবন পাল্টে দিতে পারে।

প্লিজ!

Comments

comments