ব্রেকিং দ্যা সাইলেন্স: আমিও ছিলাম শিশু নির্যাতনের শিকার

(নীচে লেখা প্রতিটি ঘটনা সত্য| আপনারা এটি চাইলে শেয়ার করতে পারেন, সেই সাথে নীরবতা ভেঙে নিজের অভিজ্ঞতাও লিখতে পারেন| সময় এসেছে আমাদের হারানো শৈশবের প্রতিশোধ নেবার)

আজ থেকে ছাব্বিশ বছর আগের কথা| বাবার সাথে হেঁটে যাচ্ছিলাম চট্টগ্রামের মিমি সুপার মার্কেটের দিকে| আমার পাশ দিয়ে সিগারেট খেতে খেতে যাচ্ছিল এক লোক, আব্বু একটু সামনে যেতেই আমার হাতে আস্তে করে একটা ছ্যাঁকা দিয়ে দূরে চলে গেল| আমি শুরুতে বুঝিনি, টের পেলাম হাতে ফোস্কা পড়েছে, ব্যাথা করছে|

আরেকদিনের ঘটনা, স্কুল এর সিঁড়ি দিয়ে নামছি| প্যান্টের জিপার ঠিক করার নাম করে খুব অশালীনভাবে হাত চালালো ওই স্কুলে চাকুরি করা এক দপ্তরী| বুঝতাম না কিছু, কিন্তু প্রচন্ড ভয় আর অজানা লজ্জায় কাউকে কিছু বলিনি|

স্রষ্টা আজ আমাকে পুলিশ অফিসার বানিয়েছেন, অনেক ভয়াবহ অভিজ্ঞতার মুখোমুখি করিয়েছেন| কিন্তু চার বছর বয়েসি ছোট্ট মাসফি (আমার ডাকনাম) যে অভিজ্ঞতার ভেতর দিয়ে গিয়েছিল অত্যন্ত সচেতন বাবা মা থাকার পরেও, এই এতদিন পর সেটা চিন্তা করলে প্রচন্ড ক্রোধে সবকিছু ধ্বংস করে দিতে ইচ্ছে করে মাঝে মাঝে| বাবা মা খুব খেয়াল রাখতেন এ বিষয়গুলো নিয়ে,তারপরেও বদমায়েশগুলো ঠিকই সুযোগ খুঁজে নিয়েছিল|

YES, I EXPERIENCED SEXUAL HARASSMENT AS A CHILD.IT TOOK ME A LOT OF COURAGE TO SPEAK ABOUT IT TODAY

আমি মানসিকভাবে পঙ্গু হয়ে যেতে পারতাম, স্রেফ কপালের জোরে হইনি|
বিদেশে চাইল্ড এ্যাবিউজ রিপোর্ট দেখিয়ে “আমাদের দেশে এসব হয়না” বলে যারা তৃপ্তির ঢেঁকুড় তুলছেন, তাঁরা বোকার স্বর্গে বাস করছেন|

আমাদের আশেপাশেই পিশাচের দল লুকিয়ে আছে, আত্মীয়স্বজনদের ভিতরেই| আমার এক বান্ধবীকে সাত বছর বয়েসে রেইপ করেছিল তার আপন চাচা, আরেক বান্ধবীকে পাঁচ বছর বয়েসে এ্যাবিউজ করেছিল তার আপন মামা|

উভয় ক্ষেত্রেই মা বাবাকে জানানোর পরেও তথাকথিত সমাজের স্বার্থে এই জঘন্য অন্যায়গুলো ধামাচাপা দেয়া হয়েছিল|

আরও কিছু উদাহরণ দিই, লেখাটি স্ট্যাটাসে দেবার পর ইনবক্সে যে উদাহরণগুলো এসেছে তা পড়ে গা শিউরে উঠেছে:

1) পাঁচ বছর বয়েসে পবিত্র কুরআন পড়াতে আসা হুজুরের কাছে এ্যাবিউজ হত অনিমা (ছদ্মনাম)| যোনীদেশ ক্ষুদ্র হওয়ায় পেনিট্রেশন সম্ভব ছিলনা, কিন্তু সামনে কুরআন থাকা অবস্থাতেই এক হাতে ওকে এ্যাবিউজ করত হুজুর নামের শুওরটি, আরেকহাতে মাস্টারবেট করত|

2) আপন দুলাভাই কর্তৃক সোডোমির (পায়ুকাম) শিকার হয়েছিল রাজু| বড়বোন খুব একটা শিক্ষিত নয়, তাই বলেও বোঝাতে পারেনি|

3) ভিডিও গেইমের দোকানে কর্মচারী কর্তৃক ধর্ষণের শিকার হয়েছিল আসাদ, এই ঘটনা সে ত্রিশ বছর ধরে বয়ে বেড়াচ্ছে|

যেটা বুঝলাম, পিশাচের দল নির্যাতনের সময় শিশুদের লিঙ্গ বিচার করেনা| এত শত শত ছেলে শিশুও যে মেয়ে শিশুদের মত নির্যাতনের শিকার হয়, এটা দেখে শিউরে উঠেছি|

আমার মনোকষ্ট থেকে লেখা ছোট একটি স্ট্যাটাস এরকম ভয়াবহ একটা ক্ষতের মুখ উন্মোচন করবে এটা আমার কল্পনারও বাইরে ছিল|আপনাদের অতীতের নারকীয় অভিজ্ঞতা স্মরণ করিয়ে দেবার জন্যে আমি ক্ষমা চাইছি|

সমাজ নিয়ে আমার অভিজ্ঞতা খুব একটা প্রীতিকর নয়, আর যে সমাজ ভিকটিমের বদলে অপরাধীর সাফাই গায়- আই এ্যাম নট রিয়েলি আ বিগ ফ্যান অফ ইট|
আমার এ লেখাটি কেউ পড়বেন কিনা জানিনা, শিশুবয়েসে নির্যাতনের শিকার কারো চোখে যদি পড়ে তবে জেনে রাখুন, আপনার ওই মর্মান্তিক অভিজ্ঞতার আমিও একজন ভাগীদার|

সময় এসেছে নীরবতার সংস্কৃতি চুরমার করে দেবার| ছেলেবেলায় যার হাতে নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন, শুওরটার মুখোশ সামাজিকভাবে খুলে দিন|
অপরাধী নিকটাত্মীয় হলেও তাকে আইনের মুখোমখি করুন|
আপনি যা করতে পারেন:

1) শিশুকে কড়া নজরে রাখুন, নিকটাত্মীয়রাও নির্যাতন করতে পারে এবং এটাই সবচেয়ে কমন| আপনার শিশু কারো কাছে যেতে ভয় পাচ্ছে বা অস্বাভাবিক আচরণ করছে কিনা খেয়াল রাখুন

2) শিশুকে শেখান তার শরীরের কোন অংশে কেউ হাত দিলে দ্রুত যেন আপনাকে জানায়| তাকে তার ভাষায় বুঝান যেন ভয় বা লজ্জা না পেয়ে সরাসরি আপনাকে জানায়|

3) আপনি যদি মানবসন্তান হয়ে থাকেন, অপরাধী যেই হোক না কেন তথাকথিত সমাজের ভয়ে তাকে ছাড় দেবেন না| তাকে সামাজিকভাবে অপদস্ত করুন, তার বিরূদ্ধে মামলা করুন, নিকটাত্মীয় হলেও সম্পর্ক ছিন্ন করুন| এ ব্যাপারে জিরো টলারেন্স|

4) বাংলাদেশে বিশ বছর ধরে একটি এনজিও কাজ করছে এ বিষয়টি নিয়ে, তাদের সহায়তা নিতে পারেন:

www.breakingthesilencebd.org

আসল কথা হল, লড়াই থামাবেন না|

চার বছরের ওই ছোট্ট মাসফির জন্যে আমি মাঝে মাঝে গোপনে কাঁদি|

আর কেউ না কাঁদুক আগামীর বাংলাদেশে|

Comments

comments