জীবনকে বদলে দেয়া সেরা পাঁচ বই

একটা মানুষ যদি অক্ষরজ্ঞান লাভের পর শুধুমাত্র পাঁচটা বই পড়ার অনুমতি পায়, কোন পাঁচটা বই পড়লে আপনি মনে করেন তার সারাজীবন চলে যাবে?

আমি আমার পক্ষ থেকে এ প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছি, প্রতিটা বইয়ের সাথে এক দু লাইনের ব্যাখ্যা সহ। সম্মতি/অসম্মতি/সংযোজন/বিযোজন করতে কমেন্ট সেকশনে আলোচনা করুন। উল্লেখ্য, ধর্মগ্রন্থগুলো বিতর্ক এড়াতে বাদ দেয়া হয়েছে।

এক‬) দি আলকেমিস্ট: পাউলো কোয়েলহো এর এই বইটি জীবনের স্পিরিচুয়াল জার্নিকে ব্যাখ্যা করেছে।images (1)

If you want to achive something, the whole universe conspires in helping you achieving it- এ বইয়ের অমর উক্তি।

 

 

 

দুই‬) দি আর্ট অফ ওয়ার: আড়াই হাজার বছর ধরে চীনা সমরবিদ সান জু এর এ বই বিশ্বের সব কয়টি মিলিটারি স্কুলে পড়ানো হচ্ছে । কিভাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হবেন, এটা হচ্ছে এ বইয়ের মূল কথা।images (2)

If you know yourself and know your enemy, you will be victorious in a hundred battle.If you know only yourself or your enemy, for every win you will suffer a loss.If you know neither yourself nor your enemy, you will be doomed to defeat in every battle.

নেপোলিয়ন এবং ডিউক অফ ওয়েলিংটন, দুজনেই এ বই পড়েছিলেন!

 

 

তিন‬) স্যাপিয়েন্স-আ ব্রিফ হিস্ট্রি অফ হিউম্যান কাইন্ড: ইউভাল নোয়াহ হারারির এই বইটি আমার কাছে গত বিশ বছরের সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ বই বলে মনে হয়েছে এবং প্রতিটি স্কুলে বইটি পাঠ্যপুস্তক হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা দরকার বলে আমি মনে করি। মানব জাতির জন্ম ইতিহাস, কিভাবে আজকের মানুষ এ পর্যায়ে এসেছে এবং এ পর্যন্ত ইতিহাসের মোড় ঘুরিয়ে ফেলা ঘটনাগুলো কি কি,তারা এ সময় থেকে ভবিষ্যতে কোথায় যাচ্ছে- এর এমন সুখপাঠ্য বর্ণনা খুব কমই আছে। কিভাবে ধর্মীয় ও রাজনৈতিক মিথগুলো কোটি কোটি মানুষকে এক সূত্রে বেঁধে রাখে এর চমকপ্রদ ব্যাখ্যা পড়ে আমার মাথা ঘুরে গিয়েছে, পৃথিবীটাকে সম্পূর্ণ ভিন্নভাবে দেখতে শিখেছি।images (3)

এ বইটা আরো দশ বছর আগে পড়ার সুযোগ থাকলে মগজের পচন থেকে বহু আগেই রক্ষা পেতাম।

 

 

 

 

চার‬) মহাভারত- পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ এ মহাকাব্য না পড়া মানে সাহিত্যের মহাসাগর থেকে নিজেকে বঞ্চিত করা। ন্যায় অন্যায় , ধর্ম অধর্ম , দর্শন, সমরনীতি, ইতিহাস, লোকাচার কি নেই এই মহৎ গ্রন্থটিতে! এটা কোন নির্দিষ্ট ধর্মের বই নয়, মহাভারত মানবজাতির সম্পদ, আমাদের সম্পদ। যতবার যত জায়গা থেকে পড়ি, ততবার ততরকম ভিন্ন ভিন্ন শিক্ষা ফুটে আসে চোখের সামনে। মহাভারত থেকে উদাহরণ নিয়ে সাম্প্রতিক সমাজের যে কোন ঘটনার সামাজিক ও রাজনৈতিক ব্যাখ্যা দেয়া সম্ভব। উদাহরণ: একলব্যের ঘটনা থেকে সাম্প্রতিক ভ্যাট আন্দোলনকে ব্যাখ্যা করা যায় (একটা লেখায় করেছিলামও)।images (4)

এ বইয়ের মূলকথা আমার কাছে মনে হয়েছে মানব জীবনের অর্থহীনতার হাহাকার, এর ক্ষুদ্রতা এবং অস্থায়ীত্বের বিলাপ।পাণ্ডবদের স্বর্গারোহন এই হাহাকারকে ঢাকতে পারেনি কিছুই। নশ্বর এ মানবজন্ম যে সাদা কালোর মিশ্রণ, দিন শেষে যে সবাই মহাকালের কাছে পরাজিত- এ সত্য উপলব্ধি করতে মহাভারত পাঠের বিকল্প নেই। উপেন্দ্রকিশোরের “ছেলেদের মহাভারত” দিয়ে শুরু করুন, মাহবুব লেনিনের “অভাজনের মহাভারত” দেখুন এবং তারপর রাজশেখর বসু/ কালীপ্রসন্ন সিংহ/কাশীরাম দাসের মহাভারতে আশ্রয় নিন।

ঠকবেন না নিশ্চিত!

 

পাঁচ‬) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের উনিশশ বাহাত্তর সালের অবিকৃত সংবিধান:BD_contitution_v2

বিসিএস পরীক্ষার জন্যে প্রথম পড়েছিলাম এটি, এবং এখনো বিমুগ্ধ বিস্ময়ে পড়ে চলেছি। এরকম একটি দলিল আমাদেরকে পাঠ্যবইয়ে পুরোটা পড়ানো হয়না, এটা একটা লজ্জার কথা। শাসক শ্রেনী চায়না সাধারণ মানুষ তাদের অধিকার জানুক, তাই এই ব্যবস্থা।

বাহাত্তরের বাংলাদেশের সংবিধান বিশ্বের ইতিহাসে একটি অনন্য দলিল, এবং একে আমার সেরা পাঁচে অন্তর্ভুক্ত করতে একটুও দ্বিধা হয়নি।

আধুনিক যুগের ইউটোপিয়া প্রতিষ্ঠায় বাহাত্তরের সংবিধান বৈশ্বিক পটভূমিতেই একটি উদাহরণ, যেটি অনুসরণ করতে না পারার ফলেই দেশের আজ এই অবস্থা।

নিজেকে নাগরিক বলে যদি দাবী করেন, সংবিধানটা আপনাকে পড়তেই হবে। সংবিধান পড়েননি মানে আপনি নাগরিকই নন! এই লজ্জা ঢাকতে দ্রুত গুগল করুন!

উপরের প্রতিটা বই ফ্রি তে গুগল করলেই পাবেন। পড়ুন, সমৃদ্ধ হোন, জ্ঞানের শক্তি কাজে লাগিয়ে জীবনযুদ্ধে জয়ী হোন!

বইপড়ুয়া আর নন পড়ুয়ার পার্থক্য কি, সেটা পোস্টের ফিচার’ড ছবিতেই পাবেন।

আপনি কোনটা হবেন, তা আপনার হাতেই।

Comments

comments